কুড়িগ্রামের উলিপুরে সরকারি নির্দেশনা তোয়াক্কা না করে অতিরিক্ত জন্ম নিবন্ধন ফি আদায়ের অভিযোগ উঠেছে গুনাইগাছ ইউপি সচিব জাহিদ হাসানের বিরুদ্ধে। নিয়ম অনুযায়ী ৫০ টাকা ফি নেয়ার কথা থাকলেও ২০০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে জনপ্রতি। কোন কোন ক্ষেত্রে ৪০০ টাকাও নেয়া হয়। এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) অভিযোগ করেছেন এক ভুক্তভোগী।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গুনাইগাছ ইউনিয়নের কৃষ্ণমঙ্গল গ্রামের অনার্স পড়–য়া এক শিক্ষার্থী তার ছোট ভাইয়ের জন্ম নিবন্ধন করতে অনলাইনে আবেদন করে ফরমসহ অন্যান্য কাগজপত্র জমা দিতে ইউপি কার্যালয়ে যান। এ সময় সরকার নির্ধারিত ৫০ টাকা ফি জমা দিতে চাইলে তা নিতে অস্বীকার করা হয়। এরপর বাধ্য হয়ে সচিবের চাহিদা মত ২০০ টাকা প্রদান করেন তিনি।

অভিযোগকারী আতাহার আলী জানান, সরকার নির্ধারিত ফি এর চেয়ে ইউনিয়ন পরিষদের সচিব সবার কাছে ২০০ টাকা করে অতিরিক্ত নিচ্ছেন। কেউ তার দাবীকৃত অতিরিক্ত ফি দিতে না চাইলে তাকে নানা ভাবে হয়রানী করে কালক্ষেপন করে আরো বেশি টাকা আদায় করেন। যেহেতু বর্তমানে জন্ম নিবন্ধনের জরুরী প্রয়োজন তাই সুযোগ বুঝে সকলের কাছে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। তাই আমি বাধ্য হয়ে ঘটনার সুষ্ঠ সমাধানের জন্য ইউএনও স্যারের কাছে অভিযোগ করেছি।

সরেজমিন গুনাইগাছ ইউনিয়ন পরিষদের গিয়ে দেখা যায়, দল বেঁধে মানুষ নতুন জন্ম নিবন্ধন, সংশোধনসহ অনলাইন কপি নেয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। এ সময় গুনাইগাছ ইউনিয়নের বাসিন্দা আইয়ুব আলী জানান, ছেলের জন্ম নিবন্ধনের জন্য অনলাইনে আবেদন করে সে কপি জমা দিতে এসেছি। সরকারি ফি অনুযায়ী ৫০ টাকা নেয়ার কথা কিন্তু সবার কাছে ২০০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। তিনি আরও জানান, প্রতিদিন প্রায় ৫০-৬০ জন মানুষ জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের জন্য আসছেন। আর সবার কাছে জনপ্রতি ২০০ টাকা করে অতিরিক্ত আদায় করা হচ্ছে। সেখানে উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, সচিব নানা অজুহাতে অনেকের কাছ থেকে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আদায় করছেন। চাহিদামত টাকা না দিলে বার বার ঘুরাতে থাকেন। যেহেতু জন্ম নিবন্ধন প্রয়োজন তাই অতিরিক্ত টাকা নিলেও কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।
গুনাইগাছ ইউনিয়ন পরিষদের হিসাব সহকারী তাসলিমা ইসলাম জানান, চেয়ারম্যানেই নিদের্শেই জন্ম নিবন্ধনের ফি বাবদ ২০০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। কোন কিছুর জানার থাকলে ইউপি চেয়ারম্যান বা সচিবের সাথে কথা বলেন। উনারাই এ সম্পর্কে ভালো বলতে পারবেন।
গুনাইগাছ ইউনিয়ন পরিষদের সচিব জাহিদুল হাসানের কাছে জন্ম নিবন্ধন ফি বাবদ টাকা বেশি নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য না করে বলেন, এ বিষয়ে চেয়ারম্যান সাহেব ভালো বলতে পারবেন। আপনারা চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলেন।
গুনাইগাছ ইউপি চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান বলেন, কারো কাছে বেশি টাকা আদায় করার সুযোগ নেই। তবে অনলাইন কপির প্রিন্ট খরচ বাবদ ১০-২০ টাকা বেশি নিতে পারে। কিন্তু মানুষকে হয়রানী করে এতো টাকা বেশি নেয়া অন্যায়। বিষয়টি জরুরী ভাবে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপুল কুমার অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার বলেন, বিষয়টি তদন্ত করার জন্য পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তদন্তে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।